১০,০০০ টাকা মুচলেকায় আসিফের জামিন

তথ্যপ্রযুক্তি আইন ও প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ১০ হাজার টাকা মুচলেকা দিয়ে জামিন পেয়েছেন কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর। মামলায় পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করার আগ পর্যন্ত এ জামিন বহাল থাকবে। সোমবার (১১জুন) ঢাকা মহানগর হাকিম কেশব রায় তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।

সকালে আদালতে তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। পরে জামিন আবেদনে শুনানি শেষে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে গতকাল রোববারও আসিফের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। তবে কোনো কারণ উল্লেখ্য না করে জামিন আবেদনটি প্রত্যাহার করে নেন।

এর আগে, গত মঙ্গলবার (০৫ জুন) দিনগত রাত দেড়টায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি টিম কণ্ঠশিল্পী আসিফকে তার অফিস থেকে গ্রেপ্তার করে। সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী শফিক তুহিন কর্তৃক তেজগাঁও থানার দায়ের করা তথ্যপ্রযুক্তি আইন ও প্রতারণার একটি মামলায় (মামলা নম্বর ১৫) তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শফিক তুহিন এজাহারে অভিযোগ করেছেন, গত ১ জুন আনুমানিক রাত ৯টার দিকে চ্যানেল ২৪-এর সার্চ লাইট নামের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসিফ আকবর তার অনুমতি ছাড়াই তার সংগীতকর্মসহ অন্যান্য গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীদের ৬১৭টি গান সবার অজান্তে বিক্রি করেছে। পরে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, আসিফ আকবর আর্ব এন্টারটেইনমেন্টের চেয়ারম্যান হিসেবে অন মোবাইল প্রা. লি. কনটেন্ট প্রোভাইডার, নেক্সনেট লি. গাক মিডিয়া বাংলাদেশ লি. ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গানগুলো ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে ট্রু-টিউন, ওয়াপ-২, রিংটোন, পিআরবিটি, ফুলট্রেক, ওয়াল পেপার, অ্যানিমেশন, থ্রি-জি কন্টেন্ট ইত্যাদি হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যবহার করে অসাধুভাবে ও প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছে।

এজাহারে তিনি আরও উল্লেখ করেন, পরে ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গত ২ জুন রাত ২টা ২২ মিনিটে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে অনুমোদন ছাড়া গান বিক্রির এই ঘটনা উল্লেখ করে একটি পোস্ট দেন। তার ওই পোস্টের নিচে আসিফ আকবর নিজের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে অশালীন মন্তব্য ও হুমকি দেন।পরের দিন রাত ৯ টা ৫৯ মিনিটে আসিফ আকবর তার প্রায় ৩২ লাখ লাইকার সমৃদ্ধ ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে লাইভে আসেন। ৫৪ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড লাইভ ভিডিওর ২২ মিনিট থেকে তার বিরুদ্ধে অবমাননাকর, অশালীন ও মিথ্যা-বানোয়াট বক্তব্য দেন।

ভিডিওতে আসিফ আকবর তাকে (শফিক তুহিন) শায়েস্তা করবেন এ কথা বলার পাশাপাশি ভক্তদের উদ্দেশে বলেন, তাকে যেখানেই পাবেন সেখানেই প্রতিহত করবেন। এই নির্দেশনা পেয়ে আসিফ আকবরের ভক্তরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে হত্যার হুমকি দেয়। আসিফ আকবরের এই বক্তব্য লাখ লাখ মানুষ দেখেছে। তিনি উসকানি দিয়েছেন। এতে তার (সফিক তুহিন) মানহানি হয়েছে। এজাহারে শফিক তুহিন আরও উল্লেখ করেন, বিষয়টি সংগীতাঙ্গনের সুপরিচিত শিল্পী, সুরকার ও গীতিকার প্রীতম আহমেদসহ অনেকেই জানেন।

আসিফ-শফিকের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছিল যেভাবেঃ আসিফ আকবর এবং শফিক তুহিন দুজনেই বাংলা গানের জনপ্রিয় শিল্পী। দুজনই বাংলাদেশে গানের তারকা। তবে গত বেশ কিছুদিন ধরেই উভয়ের মধ্যে চরম মনোমালিন্য চলছিল এবং সেটি উঠে এসেছে দু’জনের ফেসবুক পাতায় দেয়া তাদের পোস্টগুলোতে। এতে দেখা যায় একজন আরেকজনের সমালোচনায় বেশ কিছুদিন ধরেই মুখর ছিলেন সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমে। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি মামলায় গড়িয়েছে এবং ওই মামলায় গায়ক আসিফ আকবর এখন কারাগারে।

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার হয়। যার মূল বিষয় ছিল – মেধাস্বত্ব আইনের তোয়াক্কা না করেই গীতিকার এবং সুরকারদের বঞ্চিত করে গান বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে।ওই অনুষ্ঠানে শিল্পী প্রীতম আহমেদ কিছু কাগজপত্র উপস্থাপন করে অভিযোগ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন গীতিকার এবং সুরকারদের গান প্রতারণার মাধ্যমে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। ফলে তারা নামের স্বীকৃতি এবং আর্থিকভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। সে তালিকায় গায়ক আসিফের নাম ছিল বলে অভিযোগ উঠে।

অনুষ্ঠানটি প্রচার হওয়ার পর গায়ক শফিক তুহিন তাঁর ফেসবুক পাতায় লিখেছিলেন, “গান তুমি কার? দেখুন কিভাবে মেধাস্বত্ব চুরি করে শিল্পীদের ফকির বানিয়ে একদল সংগীত দুর্বৃত্ত সম্পদের পাহাড় গড়ে।” নিজের ফেসবুক পেজে শফিক তুহিন কিছু কাগজপত্র শেয়ার করে স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে গান বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। বিষয়টিতে সাংঘাতিক ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আসিফ আকবর এবং স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করেন।তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় লাইভে আসেন ৪ঠা জুন।দীর্ঘ ওই ফেসবুক লাইভে প্রীতম আহমেদ এবং শফিক তুহিনের কড়া সমালোচনা করেন আসিফ আকবর।তাদের ব্যক্তিগত জীবনের নানা বিষয় নিয়েও কথা বলেন তিনি।

এনিয়ে আসিফ আকবর, শফিক তুহিন এবং প্রীতম আহমেদের দ্বন্দ্ব আরও প্রকাশ্যে চলে আসে। শফিক তুহিন ফেসবুকে অভিযোগ করেন, “অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করায় প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছি; কিছু হলে দায়ভার আসিফ আকবরের।”এরপর আসিফ আকবরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন শফিক তুহিন এবং ওই মামলায় প্রাথমিক তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা সিআইডি।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, মামলার কাগজপত্রে গায়ক আসিফের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে।একটি অভিযোগ হচ্ছে, ফেসবুকের মাধ্যমে হুমকি এবং গালিগালাজের অভিযোগ। সেজন্য তথ্য-প্রযুক্তি আইনে মামলা হয়েছে। অপরটি অভিযোগটি হচ্ছে, শফিক তুহিনের গান নিয়ে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়া।সেটি নিয়ে মেধাস্বত্ব আইনে মামলা হয়েছে বলে সিআইডি জানিয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য গায়ক আসিফ আকবরের স্ত্রী সালমা আসিফ মিতুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাৎক্ষনিকভাবে কোন মন্তব্য করেননি।আসিফ আকবরের একক অ্যালবামের সংখ্যা ৩০টি এবং মিশ্র ও দ্বৈত অ্যালবামের সংখ্যা প্রায় ৯০টি। সংগীত জগতে এক সময় আসিফ আকবর, শফিক তুহিন এবং প্রীতম আহমেদ বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়।

আসিফ আকবর সংগীত জগত থেকে প্রায় পাঁচ বছর দূরে থাকার পর বছর দু’য়েক আগে তিনি আবারো ফিরে আসেন।এরই মধ্যে তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথেও জড়িয়েছিলেন। তিনি বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্যও হয়েছিলেন।এক পর্যায়ে তিনি সেখান থেকে পদত্যাগ করেন। কিন্তু তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি বলে জানিয়েছে বিএনপির একটি সূত্র। অন্যদিকে, গায়ক প্রীতম আহমেদ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে গড়ে ওঠা শাহবাগ আন্দোলনে বেশ সক্রিয় ছিলেন।